প্রাথমিক শিক্ষায় চারু ও কারুকলা (ম্যানুয়ালসহ):
কলা:
মানুষের কার্যাবলির মধ্যে যে বিশিষ্ট রুপভঙ্গি মানুষকে আনন্দ
দেয়, তাকেই কলা বলে।
(ক) চারুকলা ও
(খ) কারুকলা।
চারুকলা: যে
কলা মনের অনুভূতিকে সৌন্দর্য রসে সিক্ত করে মনে বিপুল আনন্দ সঞ্চার করে ও মননকে দোলা
দেয় এবং যা
প্রধানত হৃদয়াবেগ প্রসূত ও সৃষ্টিমূলক তা-ই চারুকলা।
চারুকলার শ্রেণি বিভাগ:
১. চিত্রকলা (Painting), ৬. সাহিত্যকলা (Literature)
২. সংগীত কলা (Music), ৭. নাট্যকলা (Dramaties)
৩. নৃত্যকলা (Dance), ৮. রন্ধনকলা (Culinary)
৪. ভাস্কর্য (Sculpture), ৯. ক্রিড়া (Acrobatics)
৫. স্থাপত্যকলা (Arachitecture),
১০. যাদু ইত্যাদি (Magic
etc.)।
কারুকলা: যে কলা বা শিল্প প্রধানত দৈহিক ও ব্যবহারিক চাহিদা মিটানোর
সাথে আনন্দ দান করে, তাকে কারুকলা বা কারু শিল্প বলে।
কারুকলার শ্রেণি বিভাগ:
১. মৃৎ শিল্প (Ceramics), ৬. চর্ম শিল্প (Leather)
২. দারু শিল্প (Wood),
৭. বাঁশ শিল্প (Bamboo
and cane)
৩. সীবন শিল্প (Weaving),
৮. কাতাই শিল্প (Copra)
৪. ধাতব শিল্প (Matalic), ৯. রেশম শিল্প (Sericulture)
৫. কাগজ শিল্প (Paper Mache), ১০. বয়ন শিল্প ইত্যাদি (Wiving
etc.)
চারু ও কারুকলা শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
চারু ও কারুকলা শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
হলো-
(১) শিশুর সৃজনী শক্তির বিকাশ, (২) শিখনফল অর্জনে
সহায়তা, (৩) দৈনন্দিন জীবন যাত্রার সমস্যা সমাধানে, (৪) শিশুর মাংসপেশী নিয়ন্ত্রনে
সহায়তা, (৫) শিশুদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সহায়তা, (৬)শিশুদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার
বিকাশ, (৭)শিশুর চঞ্চলতা হ্রাসে সহায়তা, (৮)শিশুদের আত্ম প্রত্যয়ী হিসেবে গড়া, (৯)
পাঠে আনন্দ ও বৈচিত্রময় শিক্ষাদান, (১০) শব্দ পুঁজি বৃদ্ধি, (১১) শ্রেণি পাঠদানে একঘেয়েমিতা
দূর করতে সহায়তা, সংসার জীবনে সমস্যা সমাধানে, (১২) নান্দনিক, মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ
গঢ়ে তুলতে সহায়তা, (১৩) বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাকে শিল্পকলার মাধ্যমে কাজে লাগাতে সহায়তা,
(১৪) সভ্যতা, কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক উন্নতি সাধন।
চারু ও কারুকলা
কাজে ব্যবহৃত উপকরণাদি:
১. 3B/4B/6B পেন্সিল, ২. রাবার ও কাটার, ৩. সাইন পেন(বিভিন্ন রং),
৪. মার্কার পেন(বিভিন্ন রং), ৫. বোর্ড মার্কার(বিভিন্ন রং), ৬. স্কেল(ছোট/বড়), ৭. কাঁচি,
৮. আইকা গাম, ৯. গ্লুস্টিক, ১০. কার্টিজ পেপার, ১১. আর্ট পেপার, ১২. বক্স বোর্ড, ১৩.
পোস্টার পেপার(বিভিন্ন রং), ১৪. ভিপ কার্ড(বিভিন্ন রং), ১৫. পেন্সিল রং, ১৬. প্যাস্টেল
রং, ১৭. মোম রং, ১৮. জল রং, ১৯. কালার প্যালেট, ২০. পোস্টার রং(বিভিন্ন রং), ২১. তুলি-২,৪,৬,৮,১০
ও ১২ নং, ২২. বিভিন্ন ধরণের রঙিন কাগজ, ২৩. বিভিন্ন ধরণের রঙিন কাপড়ের টুকরা, ২৪. নারিকেলের
ছোবড়া, ২৫. ডিমের খোসা, ২৬. নারিকেল পাতা, ২৭. নারিকেল কাঠি/শলা, ২৮. তাল পাতা, ২৯.
এঁটেল মাটি, ৩০. মডেলিং টুলস, ৩১. ন্যাকড়া, ৩২. পানির পাত্র, ৩৩. হার্ড বোর্ড ও বোর্ড
ক্লিপ, ৩৪. কাঠের গুঁড়া, ৩৫. সূতা, ৩৬.সূতলী, ৩৭. আলু, ৩৮. ঢ়েঁড়স, ৩৯. করলা, ৪০. সিম
পাতা ইত্যাদি।
যে সকল প্রান্তিক
যোগ্যতার উপর গুরুত্বারোপ করে
চারু ও কারুকলার
বর্তমান শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয় সে গুলো হলো-
১. শিশুকে তার কল্পনা, কৌতুহল, সৃজনশীলতা বিকাশে আগ্রহী করে তোলা,
২. মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহশীল
করে তোলা,
৩. স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত করা, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলন করা,
৪. ভালোমন্দের পার্থক্য অনুধাবন করা,
৫. প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানা, পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে উদ্ধুদ্ধ
করা,
৬. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত করা, দেশ গড়ার কাজে
সক্রিয় হতে উৎসাহিত করা,
৭. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং শ্রদ্ধাশীল হওয়া,
৮. সর্বোপরি বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানা ও মমত্ববোধে উদ্বুদ্ধ
চারু ও কারুকলা বিষয়ের প্রান্তিক যোগ্যতা:
১. ছবি আঁকার প্রাথমিক
উপকরণের সাথে পরিচিত হওয়া।
২. খেয়াল খুশিমত ছবি
আঁকা।
৩. অভিজ্ঞতা ভিত্তিক
ও পর্যক্ষেণের মাধ্যমে ছবি আঁকা।
৪. বর্ণমালা লেখা/সুন্দর হাতের লেখার
অভ্যাস করা।
৫. রেখাচিত্র অঙ্কন।
৬. মৌলিক রঙের সাথে পরিচিত হওয়া
এবং ছবি এঁকে রং করা।
৭. অন্যান্য উপকরণের সাথে পরিচিত
হওয়া।
৮. কাদামাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা।
৯. রঙিন ও সাদা কালো কাগজ ছিঁড়ে বা কেটে াাঠা দিয়ে নানা রকম শিল্পকর্ম তৈরি
এবং রঙিন টুকরো কাপড় কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়ে ছবি তৈরি করা।
১০. পাটখড়ি, খেজুর পাতা, নারিকেল পাতা, নূড়ি পাথর, ঝিনুক, ডিমের খোসা, ছোট-বড়
কাঠের টুকরা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে কিছু তৈরি করা।
১১. পাট দিয়ে রশি, বেনী ও অন্যান্য সহজ জিনিস তৈরি করতে শেখা।
১২. বিভিন্ন জিনিস রঙ করতে পারা।
১৩. আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি আঁকা।
রং এর ধারণা:
রং এমন একটি বস্তু যা আমাদের মনকে মুগ্ধ ও আত্মবিস্মৃত করে। রং এমন একটি বস্তু
যা আমাদের বাইরের বস্তু থেকে উত্থিত আলোক তরঙ্গ চোখের ভেতরের স্নায়ুগুলোতে আঘাতের দ্বারা
উত্তেজনার সৃষ্টি করে; মানুষের চোখে যা এক এক রূপ নিয়ে ধরা পড়ে তা-ই রং।
রং এর শ্রেণি
বিভাগ:
রং কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়্ যথা-
ক) প্রাথমিক বা প্রথম স্তরের রং (Primary Colours),
খ) দ্বিতীয় স্তরের রং (Secondary Colours),
গ) তৃতীয় স্তরের রং (Tertiary Colours)
ক) প্রাথমিক বা প্রথম স্তরের রং
(Primary Colours):
লাল Red), নীল (Blue) ও হলুদ (Yellow) এই তিনটি হলো
প্রাথমিক বা প্রথম স্তরের রং। প্রাথমিক স্তরের রং কে আবার মৌলিক রং বলা হয়ে থাকে।
খ) দ্বিতীয় স্তরের রং (Secondary Colours):
দ্বিতীয় স্তরের রং প্রথম স্তরের দু’টি রং এর সংমিশ্রণে তৈরি হয়।
যেমন- (১)বেগুণী=লাল+নীল, (২)সবুজ=হলুদ+নীল, (৩)কমলা=লাল+হলুদ।
গ) তৃতীয় স্তরের রং (Tertiary Colours):
তৃতীয় স্তরের রং একটি প্রথম স্তরের রং ও একটি দ্বিতীয় স্তরের রং এর সংমিশ্রণে
তৈরি হয়। যেমন-(১) ইটের রং=লাল+কমলা, (২) আলকাতরার রং=লাল+বেগুণী, (৩) কনক বা খাঁটি
সোনার রং=হলুদ+কমলা, (৪) ময়ূর কণ্ঠি রং=নীল+সবুজ, (৫) ধূসর রং=নীল+বেগুণী।
উল্লেখ্য, সাদা, কালো এবং সকল প্রকার ধূসর রংগুলোকে নিরপেক্ষ রং বলে। এই রং
গুলো বিশেষ কোন রং এর পক্ষে নয়। অর্থাৎ সকল প্রকার রং এর উপরেই অল্প বিস্তর প্রভাব
থাকে।
এক্ষেত্রে, সাদা রং সকল রং এর উপস্থিতি এবং কালো রং সকল রং এর অনুপস্থিতি এবং
ধূসর রং এর মধ্যে কম বেশি সকল রং এর উপস্থিতি থাকে।
রং এর গুণ বা ধর্ম
প্রত্যেকটি রং এর মধ্যে নিজস্ব গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে। রং এর সাধারনত তিনটি
গুণ দেখা যায়-
বর্ণ (Hue): বর্ণের অর্থ হচ্ছে বিশেষ কোন রং এর সমাবেশ।যেমন-লাল,
নীল ও হলুদ রং।
রং এর গাঢ়তা (Value): উদাহরণ স্বরূপ হালকা ও গাঢ়
রং। ছবি আঁকার সময় কোন কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে হালকা ও গাঢ় রং ব্যবহৃত
হয়ে থাকে।
অনুজ্জ্বলতা (Intensity) ও উজ্জ্বলতা (Purity): প্রয়োজনবোধে ছবিতে উজ্জ্বলতা
বৃদ্ধি ও হ্রাস করবার প্রয়োজন হয়।
রং এর মানসিক
প্রতিক্রিয়া:
রং এর সঙ্গে মানুষের ।নুভূতি ও ভাবাবেগের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।বিভিন্ন
প্রকার রং মানুষের মনে বিভিন্ন ধরণের মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যেমন-
লাল: লাল রং মানুষের মনে উত্তেজনার
সৃষ্টি করে।
নীল: গাঢ় রং গভীরতার আভাস দেয়।
হলুদ : আনন্দ, উল্লাস বা উৎফুল্লতার
প্রতীক।
সাদা : সাদা রং হলো শান্তি, পূর্ণতা
ও পবিত্রতার প্রতীক।
কালো : কালো রং শোক-তাপ, দুঃখ-বিপদ
এর ইঙ্গিত বহন করে।
সবুজ : সবুজ রংকে যৌবনের রং বা চির
নবীনতার প্রতীক মনে করা হয়।
এছাড়াও আরও কিছু রং এর অন্তর্নিহিত অর্থ আছে যা নিম্নে
উল্লেখ করা হলো:
১. ধূসর-দুঃখ, (২) বেগুণী-ধৈর্য, (৩) লাল(উজ্জ্বল)-বীরত্ব, (৪)লাল(হালকা)-অহংকার,
(৫)সিঁদুর-ভালোবাসা, (৬)সবুজ(মলিন)-ঈর্ষা, লোলুপতা, (৭)রক্তিম(ভোরের আকাশ)-আশা, প্রসন্নতা,
(৮)রক্তিম(ঈষৎ হরিৎবর্ণ)-উৎসাহ, (৯)নীল(ঊজ্জ্বল)-ন্যায় ও সততা, ১০)নীল(মলিন)-নিরুৎসাহ।
প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি ডাউনলোড/খেতে নিচের বক্সে ক্লিক করে প্লিজ ৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন-
প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি ডাউনলোড/খেতে নিচের বক্সে ক্লিক করে প্লিজ ৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন-
সুপ্রিয় পাঠক, ফেসবুকে
আমি আছি এখানে। আপনাদের
শুভ কামনায়- আবু বকর সিদ্দিক, দুর্গাপুর, রাজশাহী।
tomar mayrea bap
উত্তর দিনমুছুন